তিস্তা নিউজ ডেস্ক ঃ
জ্বালানি তেলের দাম স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নির্ধারণ করার নিয়ম চালু হওয়ার পর জনসাধারণের প্রত্যাশা ছিল আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের সঙ্গে সমন্বয় হলে জ্বালানির দাম অনেক কমে আসবে। দুর্ভাগ্যবশত সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করায় জ্বালানি তেলের দামে যথেষ্ট পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়নি। বরং এ সময়কালে জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুনাফা করতে দেখা গেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এ পর্যন্ত মোট তিনবার জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। পূর্ববর্তী সরকার আইনি পরিবর্তনের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব বিইআরসির পরিবর্তে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে প্রদান করে। প্রথম দফায় গত বছরের ৩১ আগস্ট অকটেন ও পেট্রলের দাম লিটারে ছয় টাকা কমানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় গত ৩১ অক্টোবর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম শূন্য দশমিক ৫ টাকা কমিয়ে আনা হয়, যদিও পেট্রল ও অকটেনের দাম অপরিবর্তিত থাকে।
সর্বশেষ ১ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১ টাকা কমানো হয়েছে। সিপিডির (২০২৪) পরিচালিত গবেষণামতে, এ ধরনের মূল্য সমন্বয় বাজারভিত্তিক মূল্যকাঠামোর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। সিপিডির মতে, সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমানো সম্ভব।
গত বছরের মার্চ থেকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ জ্বালানি তেল, বিশেষত ডিজেল, পেট্রল, অকটেন, কেরোসিন ও জেট ফুয়েলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণী ব্যবস্থা চালু করেছে। আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী জ্বালানি খাতে সরকারের আর্থিক দায় কমাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকারের আর্থিক দায়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) এক দশক ধরে জ্বালানি তেলের দাম প্রশাসিত মূল্য (অ্যাডমিনিস্টার্ড প্রাইসিং) ব্যবস্থায় নির্ধারণকে দায়ী করা হয়।
প্রশাসিত নীতির অধীন জ্বালানির দাম নির্ধারণ করার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারের দামের সঙ্গে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম নিম্নমুখী হলেও বাংলাদেশের বাজারে তা পরিলক্ষিত হতো না। দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অধিক দামে বিপিসি স্থানীয় বাজারে তেল বিক্রি করেছে ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে। প্রতি লিটারে সর্বনিম্ন ২৫ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪৪ টাকা পর্যন্ত দামের তারতম্য লক্ষ করা গেছে।