তিস্তা নিউজ ডেস্ক ঃ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের পুনর্বাসনে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ অধিদপ্তরের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানে নিহতের পরিবারের সদস্য এবং আহতদের মাসিক ও এককালীন ভাতার আওতায় আনা হবে। সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ ভাতা নির্ধারণ করবে। পাশাপাশি নিহতের পরিবারের কর্মক্ষমদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।
ইতোমধ্যে অধিদপ্তর গঠনের লক্ষ্যে ১৩ পৃষ্ঠার একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। ভবন বা স্থান নির্ধারণ করা হয়নি।
তবে সম্প্রতি ৬৩ জনের একটি জনবল কাঠামো অনুমোদনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তরের কার্যক্রম শুরু হবে। তবে এর আগে নীতিমালা প্রণয়ন করে শহীদ পরিবার ও আহতদের সহায়তা দিতে তৎপরতা চলছে।
এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অধিদপ্তর গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এ লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় নীতিমালা তৈরি করছে। চলতি মাসে নীতিমালা অনুমোদন হতে পারে। সরকার স্থান নির্বাচন করার পর সেখানে অধিদপ্তরের কার্যক্রম শুরু হবে।’
অন্যদিকে জনবল কাঠামো নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইশরাত চৌধুরী বলেন, ‘অধিদপ্তর গঠনের লক্ষ্যে জনবল কাঠামো গত সপ্তাহে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। জনবল কাঠোমা অনুমোদন হলে আগামী মাসে অধিদপ্তরের কার্যক্রম শুরু হবে।’ অধিদপ্তরের কার্যালয় কোথায় হবে– এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘স্থান নির্ধারণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে।’
এদিকে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, খসড়ার নামকরণ করা হয়েছে ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংগঠিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের সহায়তা বা পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রণীত নীতিমালা’। এটি এখনও পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের কর্তৃপক্ষের মতামতের ভিত্তিতে শিগগির এটি গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য চূড়ান্ত করা হবে।
গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে নিহত ও আহতের বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘নিহতদের অনেকে ছিলেন সুবিধাবঞ্চিত এবং আর্থসামাজিক মানদণ্ডে নিম্নমধ্যবিত্ত বা হতদরিদ্র শ্রেণির। অনেকে ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাদের ক্ষতি অপূরণীয়।
অন্যদিকে, জীবিত অনেকের অবস্থা জীবন্মৃতের ন্যায়। গুরুতর আহত অনেকে আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন না। তাদের জরুরি ভিত্তিতে পুনর্বাসন প্রয়োজন। যে অকুতোভয় ছাত্র-জনতা দেশকে স্বৈরাচারের কবল থেকে মুক্ত করেছেন, তাদের সে আত্মত্যাগের সামান্য প্রতিদান রাষ্ট্র দিতে পারে। যারা প্রাণ উৎসর্গ করেছেন, তাদের পরিবার বা আন্দোলনে গুরুতর আহত হয়েছেন, তাদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা, এ-সংক্রান্ত ব্যয় এবং কর্মসংস্থানের দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করতে বদ্ধপরিকর।’ খসড়ায় গণঅভ্যুত্থানে ‘ঝরে গেছে আট শতাধিক প্রাণ এবং আহত হয়েছেন হাজার হাজার ছাত্র-জনতা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
খসড়া অনুযায়ী, চার ক্যাটেগরিতে অভ্যুত্থানে আহতরা আর্থিক সহায়তা পাবেন। এর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটেগরিতে আওতাভুক্তদের ‘আজীবন সাহায্যের আওতায়’ আনা হবে। এতে উভয় হাত/পাবিহীন, দৃষ্টিহীন, সম্পূর্ণভাবে মানসিক বিকারগ্রস্ত এবং কাজ করতে অক্ষম বা অনুরূপ আহত ব্যক্তিরা অন্তর্ভুক্ত হবেন।
‘বি’ ক্যাটেগরিতে অন্তর্ভুক্তদের দীর্ঘদিন ‘সাহায্য’ দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে এক হাত/পাবিহীন, আংশিক দৃষ্টিহীন, মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত বা অনুরূপ আহত ব্যক্তিরা এই ক্যাটেগরিতে স্থান পাবেন। ‘সি’ ক্যাটেগরিতে শ্রবণ/দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত, গুলিতে আহত বা অনুরূপ আহত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ ক্ষেত্রে স্থান পাবেন, যারা এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, সুস্থ হতে আরও চিকিৎসার প্রয়োজন এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে সক্ষম হবেন। আর ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে সাধারণ আহতদের (সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম করছেন) স্থান দেওয়া হয়েছে।