Wednesday, January 22, 2025

বৈষম্যবিরোধীদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মারামারি: আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা আহতদের

 

তিস্তা নিউজ ডেস্ক ঃ মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধীদের কার্যালয়ে দুই গ্রুপের মারামারির ঘটনায় নারীসহ ৭ শিক্ষার্থী আহত হয় বলে জানা যায়।
বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধীদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুই গ্রুপের মারামারিতে এক নারী শিক্ষার্থীসহ ৭ জন আহত হয়। এ ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের ব্যাডমিন্টন খেলার মাঠে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান জুলাই আন্দোলনে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) সহ-সমন্বয়ক তানযীদ মোহাম্মদ সোহরাব রেজা।
তানযীদ বলেন, “গতকালকে সমন্বয়কদের উপস্থিতিতে দ্বিতীয়বারের মতো আমাদের ওপর হামলা করা হয়। তাদের মধ্যে ছাত্রলীগের প্রেতাত্মা ভর করেছে। তারা তাদের বাইরে কোনো ভিন্ন মত নিতে পারছেন না। আওয়ামী লীগের জায়গায় তারা তাদের রিপ্লেস করতে চায় কিনা সেটা তাদের পরিষ্কার করতে হবে। মনে রাখতে হবে বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম কারও বাপের না। যদি সেটা মনে করেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনারাও টিকতে পারবেন না।
”তিনি আরও বলেন, “জুলাই আন্দোলনের পেছনে দাঁড়িয়ে জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। আমাদেরকে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, শিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদের ট্যাগ লাগানো হচ্ছে। আমরা নাকি সেখানে (কেন্দ্রীয় কার্যালয়) হামলা করতে গিয়েছি। মঙ্গলবার আমরা হাসপাতালে প্রেস ব্রিফিং করার পরে আমাদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অনেকে অনেকভাবে যোগাযোগ করে। আমাদের বলা হয়, আমরা যাতে মামলা না করি। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিটিংয়ের জন্য বসতে বলা হয়।”

তানযীদ আরও বলেন, “আমরা বোরহানউদ্দিন কলেজে বসতে চেয়েছি। পরে তারা জানায় রাত ১১টার সময় বোরহানউদ্দিন কলেজে আসবে। পরে রাত ১২টার দিকে আসে। ওই বৈঠকে আসার কথা কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের। কিন্তু এসেছিলেন আন্দোলনের সেল সম্পাদক জাহিদ, স্বাস্থ্য কমিটির তরিকুল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী কমিটির মুন্না। পরে আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে নারাজ হই এবং সেই বৈঠক হয়নি। আমরা এখন আইনিভাবে লড়াই করে যাব।”

এসময় ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি অর্নব হোসেন বলেন, “আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে এর বিচার চাইব না। আমরা থানায় গিয়ে মামলা করব। পরে যদি থানা মামলা না নেয় তাহলে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব।”
গতকালকের ঘটনায় আহত মাসুদুর রহমান বলেন, “গতকাল তারা আমাকে রিকশা থেকে নামিয়ে আমার দাড়িতে আঘাত করেছে এবং আমাকে জঙ্গি বলে অভিহিত করেছে।”

এসময় সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন মারামারি ঘটনায় আহত আন্তা মীম, হাসিব মল্লিক, আল-আমীন তালুকদার প্রমুখ।

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনায় বিবৃতি দেয় সংগঠনটি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “অদ্য অপরাহ্নে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাংলা মোটরস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিপথগামী কয়েকজন মানুষ এসে বিভিন্ন অপ্রীতিকর স্লোগান দিতে থাকে। একসময় তারা জোর-জবরদস্তি করে কার্যালয়ের ফটক বন্ধ করে দেয়। এতে অফিস রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে তৎক্ষণাৎ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রিফাত রশিদ, আহনাফ সাঈদ খান, নাঈম আবেদিন, আসাদ বিন রনি সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে আগত ব্যক্তিদের দাবি-দাওয়া শুনতে চান। কিন্তু তারা সহযোগিতার বদলে নির্বাহী সদস্যদের ওপরও চাড়ও হন। এতে নির্বাহী সদস্য নাঈম আবেদিন আহত হন। পরবর্তীতে অন্যান্য নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগমন করলে পরিস্থিতি উত্তপ্তকারীদের কার্যালয় ত্যাগে বাধ্য করা হয় “এতে আরও বলা হয়, “সহিংসতার বদলে সৌন্দর্য এবং সম্প্রীতির বিকাশ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাথেয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মনে করে, সাংগঠনিক সকল সমস্যার সমাধান আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব। আলোচনার বদলে যারা সহিংসতার পথ বেছে নেবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের বিষয় বিন্দুমাত্র সহানুভূতি প্রদর্শন করবে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী প্ল্যাটফর্ম। সেহেতু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সারাদেশের মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার আশা আকাঙ্ক্ষাও বেশি। আমরা ছাত্র-জনতার প্রতি দায়বদ্ধ এবং তাদের অনুভূতির বিষয়ে পরিপূর্ণ সজাগ। একইসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গনঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিনির্মাণের জন্য বদ্ধ পরিকর। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে সহিংসতার বদলে সংহতি এবং সম্প্রীতি প্রাধান্য পাবে।”

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “আজকের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য দায়ী ব্যক্তিরা কেউ কেউ গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী হলেও কেউই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সাংগঠনিক পরিসরে যুক্ত নয়। ঢাকা মহানগরের দায়িত্বশীল এবং ঘটনাকালীন সময়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত নির্বাহী সদস্যদের সমন্বয়ে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে তদন্ত কাজে নিয়োজিত আছে। তদন্ত শেষে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

শেয়ার করুন