Saturday, February 1, 2025

রাজউকের প্লট বরাদ্দে নৈরাজ্য তালিকায় হাসিনার পিওন ড্রাইভার

 


তিস্তা নিউজ ডেস্ক ঃ শুধু মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী আদর্শের রাজনীতিক নন। সরকারের বিশেষ কোটায় রাজউকের প্লট বরাদ্দপ্রাপ্তদের তালিকায় আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গাড়িচালক (ড্রাইভার) এবং আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের অফিস সহকারীরাও (পিওন)। এছাড়া হাসিনা সরকার বিশেষ আস্থাভাজন বিবেচনায় বিচারপতি, আমলাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিকে ইচ্ছামতো প্লট বরাদ্দ দেয়। রাষ্ট্রীয় বিশেষ অবদানের কোটায় প্লট দেওয়া হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রাধান্য পায় ‘রাজনৈতিক আনুগত্যের বিবেচনা’।

 সংশ্লিষ্টরা জানান, আওয়ামী লীগ আমলে রাজউকের অ্যালটমেন্ট অব ল্যান্ডস রুলসের ১৩/এ উপবিধির (অসামান্য অবদান) অধীনে এসব প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এতে বলা হয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ-সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, সমাজকর্মী, সরকারি চাকরিজীবী এবং রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ব্যক্তিরা অসামান্য অবদান কোটায় প্লটের আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া রাষ্ট্র বা সরকার যদি কাউকে বিশেষ অবদান রেখেছেন বলে নির্বাচন করে, তাহলে তিনি প্লট পাবেন। 

তবে আওয়ামী লীগ সরকারের আগেও ১৯৬৯ সাল থেকে বৈষম্যমূলক হিসাবে বিবেচিত ১৩ ধারা বিদ্যমান ছিল। ১৯৮৬ সালে এক দফা সংশোধনের পর এটি ১৩/এ ধারা এবং সর্বশেষ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার ২৫ আগস্ট সংশোধিত গেজেটে ১৩এ (১) এ, বি, সি বিধি প্রণয়ন করে। এর আগে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় বহু প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা নিয়ে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে। বর্তমান সরকার এর সবই তদন্তের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু রহস্যজনকভাবে বিএনপি জমানায় প্লট বরাদ্দসংক্রান্ত ফাইল রাতারাতি রাজউক থেকে গায়েব হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। ইতঃপূর্বে রাজউকের আবাসন প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও বাড্ডা। 

মোদ্দা কথা, সব সরকারের আমলে রাষ্ট্রের জন্য অসামান্য অবদান রাখার বিশেষ কোটায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের অভিযোগ রয়েছে। এজন্য শুরু থেকেই রাজউকের প্রতিটি আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে কমবেশি অনিয়ম হয়েছে।

রাজউক বলছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালে পতনের আগ পর্যন্ত হাসিনা সরকারের আমলে হাজারেরও বেশি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ সময় নিয়মকানুনের কোনো তোয়াক্কা করা হয়নি। এতে অনেকটা ফ্রিস্টাইলে যাকে খুশি তাকে প্লট দেওয়ার রেওয়াজ তৈরি হয়। সরকার পতনের পর রাজউকের আলোচিত পূর্বাচল, উত্তরা ও ঝিলমিল প্রকল্পে বিপুলসংখ্যক প্লট বরাদ্দপ্রাপ্তদের তালিকা হালনাগাদের কাজ এখনো চলমান। 

১২ গাড়িচালক : প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গাড়িচালক নুরুল আলম, নুর নবী ও শাহিনের নামে বিশেষ কোটায় প্লট বরাদ্দ দিতে গত বছর ৩০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পত্র দেওয়া হয়। এতে তড়িঘড়ি প্লট বরাদ্দে তৎপর হয়ে ওঠে রাজউক। দ্রুততম সময়ে তাদের নামে ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পে পাঁচ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি এটি রাজউকের বোর্ড সভায় অনুমোদন পায়। এই তিনজনসহ তালিকায় থাকা ১২ জন গাড়িচালকের মধ্যে অন্যরা হলেন মতিউর রহমান, নুরুল ইসলাম লিটন, মিজানুর রহমান, সাইফুল ইসলাম, বোরহান উদ্দিন ও মাহবুব হোসেন গং। তাদের সবাইকে রাষ্ট্রীয় বিশেষ অবদান কোটায় (১৩/এ) প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। 

অফিস পিওন : গাড়িচালক ছাড়াও বিশেষ কোটায় রাজউকের বহুমূল্যবান প্লট পেয়েছেন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের বেশ কয়েকজন অফিস সহকারী (পিওন)। তাদের মধ্যে উত্তরা প্রকল্পে প্লট পান মিজানুর রহমান মিন্টু ও শেখ লোকমান। এছাড়া প্লটপ্রাপ্তদের তালিকায় আছেন দলীয় আস্থাভাজন রফিকুল ইসলাম ও মো. সামসু নামের দুজন তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ব্যক্তি। রাজউকের নথিতে তাদের প্লট প্রাপ্যতা সম্পর্কে লেখা হয় ‘রাজনৈতিক বিবেচনা’। 


প্লট পেয়েছেন আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ ওরফে ডিবি হারুনের মা জহুরা খাতুন, ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে বিদেশে পলাতক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সিদ্দিকী নাজমুল আলম, চিত্রনায়িকা বেগম অরুণা বিশ্বাস, বেগম অঞ্জনা সুলতানা, অভিনেত্রী ও সংসদ-সদস্য সুবর্ণা মোস্তাফা, জয়া আহসান, প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, শমী কায়সার, কবি অসিম কুমার সাহা ও বেগম মিনা বড়ুয়া। তাদের মধ্যে অরুণা বিশ্বাস ও শমী কায়সার আগস্টে রক্তাক্ত ছাত্র আন্দোলনের সময় ‘আলো আসবেই’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে ব্যাপকভাবে সমালোচনামুখর ছিলেন। এমনকি রাজপথ অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের ধরে কঠোর শাস্তির কথাও বলেন। অবশ্য ৫ আগস্টের পর অরুণা বিশ্বাস দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এছাড়া অভিনেত্রী শমী কায়সার গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। 


সূত্র ঃ দৈনিক যুগান্তর।


শেয়ার করুন