মুহাম্মদ ত্বহা আহমেদ: পূর্ণাঙ্গ ‘অযু’ পবিত্রতা অর্জনের উপায়। তবে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে মাসনুন তরীকায় অযু করা হলে তা একটি নেক আমলও বটে। এটি অতি সহজ আমল, যা আমরা সকলেই করি এবং দিনে একাধিকবার করি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে অযুর প্রয়োজন হয়। আমরা যদি একটু খেয়াল করে মাসনূন তরীকায় এই সহজ ও প্রয়োজনীয় আমলটি সম্পাদন করি তাহলে অতি সহজে আমরা পেতে পারি অনেক বড় বড় পুরস্কার। হাদিস হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে যে কোনো ব্যক্তি অযু করে এবং পূর্ণাঙ্গভাবে অযু করে অতঃপর বলে, তবে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা, সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। (সহিহ মুসলিম-২৩৪)
এটি একটি সুসংবাদবাহী সুন্দর হাদিস। এখানে নবীজী (সা.) অযুর ফরয, সুন্নাত ও আদায়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে উত্তমরূপে অযু করার এবং অযুর শেষে দুআ পড়ার একটি সহজ আমলের কথা বলেছেন। যা দেহকে সজীব ও পবিত্র করে, মনে প্রশান্তি ও প্রফুল্লতা দান করে। এই সহজ আমলের জন্যও আল্লাহ তাআলা তার বান্দাকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করবেন বলে সু-সংবাদ দেয়া হয়েছে। তার জন্য জান্নাতের ক’টি দরজা খুলে দেয়া হবে এবং সে নিজের ইচ্ছামতো যে কোনো দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।
অন্যান্য হাদিসে অযুর আরো ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন হযরত ওসমান ইবনে আফফান (রা.) হতে বর্ণিত, নবীজী (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি অযু করে এবং উত্তমরূপে অযু করে, তার শরীর থেকে, এমনকি নখের নিচ থেকেও গুনাহসমূহ বের হয়ে যায়। (সহিহ মুসলিম-২৪৫)
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত অপর একটি হাদিসে আছে, নবীজী বলেছেন, মুসলিম বা মুমিন বান্দা যখন অযু করে, যখন সে মুখম-ল ধৌত করে তখন পানির সঙ্গে বা পানির শেষ কাতরার সঙ্গে ওই সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায়, যা সে দু’চোখ দ্বারা করেছিল। যখন সে দুই হাত ধৌত করে তখন পানির সঙ্গে ওই সব গুনাহ বের হয়ে যায়, যা সে হাত দ্বারা করেছিল। যখন সে দুই পা ধৌত করে তখন পানির সঙ্গে ওই সব গুনাহ বের হয়ে যায়, যার দিকে সে চলেছিল। এভাবে সে গুনাহ থেকে পাকসাফ হয়ে যায়। (সহিহ মুসলিম-২৪৪)
অন্য হাদিসে এসেছে, নবীজী (সা.) সাহাবায়ে কেরামের সামনে হাউযে কাউসারের বর্ণনা দিচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন, মানুষ যেমন তার হাউয থেকে অন্য মানুষকে সরিয়ে দেয় তেমনি আমিও সেদিন কিছু মানুষকে সরিয়ে দিব। সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, সেদিন কি আপনি আমাদের চিনতে পারবেন? নবীজী ইরশাদ করলেন, বল তো, কারো যদি হাতে ও পায়ে সফেদ চিহ্ন বিশিষ্ট কিছু ঘোড়া থাকে এবং সেগুলোকে অসংখ্য কালো রংয়ের ঘোড়ার মাঝে ছেড়ে দেয়া হয় তবে সেই ব্যক্তি কি তার ঘোড়াগুলো চিনতে পারবে না?
সাহাবারা বললেন, হ্যাঁ, পারবে। ইয়া রাসূলুল্লাহ! নবী করীম (সা.) ইরশাদ করলেন, ‘তেমনি তোমাদেরও এমন কিছু চিহ্ন হবে যা অন্য কোনো উম্মতের হবে না। কিয়ামতের দিন তোমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোও অযুর কারণে ঝলমল করতে থাকবে।’ (সহিহ মুসলিমÑ২৪৬-২৪৯)
অন্য একটি সহিহ হাদিসে আরো একটি সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। হযরত উকবা ইবনে আমের (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শুনতে পেয়েছি যে, নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, কোনো মুসলিম যখন সুন্দরভাবে অযু করে অতঃপর চেহারা-মন উভয়কে আল্লাহ অভিমুখী করে দ-ায়মান হয় এবং দু’রাকাত নামায আদায় করে তখন তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (সহিহ মুসলিম-২৩৪)
উপরের হাদিসগুলো থেকে অযু ও আনুষঙ্গিক কয়েকটি আমলের নির্দেশ পাওয়া যায়Ñ ১. মাসনূন তরীকায় উত্তমরূপে অযু করা। ২. অযুর পর হাদিসে উল্লেখিত দুআ পাঠ করা। ৩. দু’রাকাত তাহিয়্যাতুল অযুর নামায পড়া। আমলগুলো খুবই সহজ কিন্তু বিনিময়ে রয়েছে বড় বড় কয়েকটি সুসংবাদÑ ১. অযুর পানির সাথে গুনাহসমূহ বের হয়ে যাবে। ২. কিয়ামতের দিন অযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ঝলমল করবে। ৩. জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। ৪. জান্নাতের সবকটি দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। অতএব সবার উচিত, মাসনূন তরীকায় আমলটি করে এসব পুরস্কার লাভে প্রতিযোগিতা করা।