Wednesday, April 9, 2025

জলঢাকা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়া



নিজস্ব সংবাদদাতা:নীলফামারীর জলঢাকা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দুর্নীতির মহা উৎসব চলছে। জলঢাকা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দলিল প্রতি অতিরিক্ত টাকা নেয়াসহ নানান অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সাব-রেজিস্ট্রার, ভেন্ডার ও দলিল লেখকদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন ভূক্তভুগীরা।
অভিযোগে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে দলিল লেখক সমিতির কয়েকজন নেতাদের যোগসাজশে রশিদ ছাড়া দলিল প্রতি অতিরিক্ত টাকা আদায় ও সামান্য ভুলে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ চলছে বিভিন্ন অনিয়ম দূর্নীতির কার্যক্রম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জমি গৃহীতা ও দলিল লেখক জানায়, ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারী ফি জমা দেবার পরেও আমাদের কাছ থেকে দলিল প্রতি অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। যার কোন রশিদ কিংবা ভাউচার আমাদেরকে দেয়া হয়না। এমনকি রশিদ চাইলেও তা পাওয়া যায়না। উল্টো ওই নেতাদের প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে হয়। সূত্রে জানা যায়, দলিল মূল্য ২৪ হাজার টাকার উপরে অতিরিক্ত ১৮’শ হতে ২৫'শ টাকা এবং এর নীচে দলিলমূল্যে ১৫’শ থেকে দুই হাজার টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে অফিসের ডেলিভারি রুমে অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মচারীর মাধ্যমে প্রতিদিন আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত এসব অর্থ। একটি বিশ্বাস্ত সূত্রে জানা যায়,প্রতি মাসে প্রায় ৭ থেকে ৮'শ দলিল রেজিস্ট্রার রেজিস্ট্রি হয়। আর আদায় করা এই মোটা অংকের টাকা মাস শেষে সাব রেজিস্ট্রার,অফিসের কয়েকজন স্টাফ ও দলিল লেখক সমিতির কয়েকজন নেতা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। এতে কেউ প্রতিবাদ করলে জমি রেজিস্ট্রি তো দুরের কথা নিজেকে লাঞ্চিতের হাত হতে রক্ষা পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়। এছাড়া কাগজপত্রে সামান্য ভুল থাকলে দাতা-গৃহীতাদের গুনতে হয় অতিরিক্ত টাকা।
জলঢাকা সাব-রেজিষ্টার অফিসের একাধিক সূত্র জানায়, নাম মাত্র দলিল লেখক সমিতির কয়েকজন প্রভাবশালী ও অফিস স্টাফের নেতৃত্বে চলে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস।
তাদের মর্জি মতো রেজিস্ট্রারকে চলতে হয়। প্রভাবশালী কয়েকজন দলিল লেখকের কথা না শুনলে তাকে প্রত্যাহার কিংবা বদলীর দাবি তোলা হয়। এমন একাধিক নজির আছে।
এরা এতই ক্ষমতাধর এদের বিরুদ্ধে কথা বলা মুশকিল। ফলে তারা দীর্ঘদিন ধরে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসটি কুক্ষিগত করে রেখেছে। টাকা আদায়কারী অবসরপ্রাপ্ত ওই কর্মচারী মোজাম্মেল হোসেন বলেন, টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি সাব রেজিস্টার এর সাথে কথা বলতে বলেন। 
জলঢাকা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি বলেন,সাব-রেজিস্ট্রার 
ছোট খাট ভুলে টাকা কিছু নেয়। নকল নবিশ নকলের জন্য ২৫০০/ করে টাকা নিচ্ছে।
নকল নবিশ জলঢাকা কমিটির সভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, আমরা  আগস্ট এর আগে ১৫০০ করে টাকা প্রতি নকলের জন্য নিতাম, এখন নকল পূর্তি ২৫০০ টাকা করে আদায় করি ও সমিতিতে জমা রাখি, পরে আমরা সকল সদস্যগণ  ভাগ করে নেই, আমরা এই টাকা নিতে থাকবো কারো বাধা মানবো না। কারো কিছু করার থাকলে, করেন। স্টাম্পের দাম বাড়িয়েছে। 
২০০/টাকার স্টাম্প ৪০০/টাকা নিতে হচ্ছে।নীলফামারি জেলা শহরে নকল প্রতি   ২৫০০/৩০০০ করে টাকা নিচ্ছে, সেখানে কারো কথা নাই।
ভেন্ডার রফিকুল ইসলাম বলেন, স্টাম্পের বাড়তি কোন টাকা নেয়া হয় না। 
অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে সাব-রেজিস্ট্রার লুৎফর রহমান বলেন,বেশি টাকা নিচ্ছে এটা আমার জানা নেই। তবে বর্তমান সরকার কোন ফি বাড়ায়নি, ফি বাড়ার কথা জহুরুল যে বলেছে তা ঠিক নয়।
তিনি আরো বলেন, দলিলের কোন অনিয়মের ব্যাপারে বাড়তি কোন টাকাও নেওয়া হয় না।
জেলা রেজিস্ট্রারের সাথে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।

শেয়ার করুন