তিস্তা নিউজ ডেস্ক ঃ দেশের প্রায় সর্বশ্রেণির মানুষ এটি মনে করেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়লাভ করবে। জয়লাভের সম্ভাবনা দেখে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী মহল থেকে দলটির বিরুদ্ধে বৈরী প্রচারণা শুরু হয়েছে। এই প্রচারণা সাম্প্রতিক নয়। বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই এই বৈরী প্রচারণা চলছে। কিন্তু এসব প্রচারণার মোকাবিলায় বিএনপির মিডিয়া উইংকে দুর্বল মনে হয়েছে। আসলে বিএনপির মিডিয়া উইং বরাবরই দুর্বল। বিএনপির বিরুদ্ধে বৈরী প্রচারণার সংক্ষিপ্ত কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি। দৈনিক কালের কণ্ঠ, দৈনিক কালবেলা, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক যুগান্তর, বিডিনিউজডটকম, জাগো নিউজসহ অনেক প্রিন্ট মিডিয়া ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে অনেক খবর ছাপা হয়েছে। বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ডাকাতি, সরকারি গুদাম থেকে চাল লুণ্ঠন, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, অস্ত্র ও মাদক কারবারÑ ইত্যাদি।
এসব অভিযোগ সম্পর্কে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব অসচেতন নয়। বিএনপির অস্থায়ী প্রধান জনাব তারেক রহমান ইতোমধ্যেই তিন হাজার দুই শ’ কর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন। তবে বিএনপির মতো এত বিশাল একটি দল, যার রয়েছে লাখ লাখ কর্মী, তাদেরকে সক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা শুধুমাত্র দলীয়প্রধান একা করতে পারেন না। এ কাজে তার স্ট্যান্ডিং কমিটির মেম্বার, অনেক উপদেষ্টা, কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যসহ মধ্যম সারির এবং স্থায়ী কমিটির সদস্যদের অতন্দ্র প্রহরীর মতো সজাগ থাকা প্রয়োজন।
বিএনপিবিরোধীদের বিরূপ প্রচারণার মধ্যেও অতি সম্প্রতি কিছু সিলভার লাইনিং বা রূপালি রেখা দেখা যাচ্ছে। গত ৯ জুলাই বুধবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন কঠোর বক্তব্য দিয়েছেন যার মধ্য দিয়ে বিএনপির আদর্শিক রাজনীতি ফুটে উঠেছে। মির্জা ফখরুল বলেছেন, পতিত স্বৈরাচারের জুলুম-নির্যাতনের সাথে জড়িত সমস্ত অপরাধীরই শুধু বিচার করলে হবে না, দল হিসেবে আওয়ামী লীগেরও বিচার করতে হবে। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ স্থানীয় নেতা এবং পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষ স্থানীয় একাধিক আমলার যে বিচার শুরু হয়েছে সেটিকে স্বাগত জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, শুধুমাত্র জুলাই বিপ্লবের নৃশংসতাই নয়, বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলসমূহের ওপর জুলুমের যে স্টিমরোলার চালানো হয়েছে তার সবগুলোর বিচার করতে হবে। বিবিসির সাম্প্রতিক রিপোর্ট সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রত্যেক অপরাধী বিশেষ করে শেখ হাসিনাসহ যারা সুপিরিয়র কমান্ডে ছিলেন তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
আগামী নির্বাচন সম্পর্কে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো কিছুই পরিষ্কার করছিল না। বিএনপি প্রথম থেকেই চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করে আসছিল। পক্ষান্তরে ড. ইউনূসের অবস্থান ছিল চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করার। এ নিয়ে বিএনপি ও অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে এক ধরনের টানাপড়েনের সৃষ্টি হয়েছিল। এ ব্যাপারে বিএনপির অস্থায়ী প্রধান তারেক রহমানের অনড় অবস্থানের কারণে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস লন্ডনে গত ১৩ জুন তারেক রহমানের সাথে দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন। এই দেড় ঘণ্টা বৈঠকের মধ্যে এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের বৈঠক হয় ওয়ান-টু-ওয়ান। ওই বৈঠকের পর টানাপড়েন বা সম্পর্কের সাময়িক শীতলতার বরফ গলতে শুরু করে। দেশি ও বিদেশি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা একবাক্যে স্বীকার করেছেন, বিগত ১৭ বছরে লন্ডনে অবস্থান করেও তারেক রহমান রাজনীতি এবং সংগঠনের নেতৃত্ব দেয়ায় পরিপক্বতা অর্জন করেছেন। তার দক্ষ নেতৃত্বের কারণেই ড. ইউনূস তার জুনের সময়সীমা থেকে শর্তসাপেক্ষে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন এগিয়ে আনতে সম্মত হয়েছেন।