তিস্তা নিউজ ডেস্ক ঃ আল্লাহ মুসলমানদের এমন বহু ইবাদত ও সৎকর্মের নির্দেশ দিয়েছেন, যা দ্বারা তাঁর সান্নিধ্য ও সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। সেই ইবাদতের অন্যতম হলো কৃতজ্ঞতার সিজদা (সিজদায়ে শুকর)। যখন কোনো ব্যক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ কোনো নিয়ামত বা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হয়, অথবা কোনো বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পায়, তখন সে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। এটি তার ঈমান শক্তিশালী করে, অন্তরে প্রশান্তি বয়ে আনে এবং জীবনের বরকত বৃদ্ধি করে।
আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘আল্লাহর ইবাদত করো এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হও।’
(সুরা : জুমার, আয়াত : ৬৬)
কৃতজ্ঞতার সিজদার মাধ্যমে মানুষ স্বীকার করে যে তার পাওয়া প্রতিটি অনুগ্রহ ও বিপদমুক্তি একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসেছে। কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ থাকে এবং তাঁর অনুগ্রহ অস্বীকার করে, সে নিঃসন্দেহে সেই নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হবে—এটিই তার অকৃতজ্ঞতার শাস্তি।
যেসব কারণে কৃতজ্ঞতার সিজদা করা উচিত
একজন মুসলিম তার জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার জন্য আল্লাহ তাআলার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সিজদায় লিপ্ত হয়।
কৃতজ্ঞতার সিজদা আদায়ের কিছু সাধারণ কারণ হলো—
সন্তান লাভ : দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে পুত্র বা কন্যা সন্তান দান করেন, তখন সে কৃতজ্ঞতার সিজদা করে।
রোগমুক্তি : আল্লাহ তাআলা যখন কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে আরোগ্য দান করেন এবং তার দুঃখ-কষ্ট দূর করেন, তখন সেই বান্দা কৃতজ্ঞতায় সিজদায় পড়ে।
বিপদ থেকে রক্ষা : আল্লাহ যখন কোনো মানুষকে আসন্ন বিপদ থেকে রক্ষা করেন—যেমন গাড়ি দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে, তখন সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে সিজদা করে।
বিজয় ও সাফল্য : আল্লাহ যখন মুসলমানদের বিজয় দান করেন—যুদ্ধক্ষেত্রে, সমাজে বা জীবনের অন্য যেকোনো ক্ষেত্রে, তখনো কৃতজ্ঞতার সিজদা আদায় করা হয়।
সুতরাং একজন মুসলিমের কর্তব্য হলো জীবনের প্রতিটি অবস্থায়—সুখে, দুঃখে, প্রাচুর্যে ও অভাবে—আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। কেননা কৃতজ্ঞতার মাধ্যমেই নিয়ামতের বৃদ্ধি ও নবায়ন ঘটে, আর আল্লাহ তাআলা কৃতজ্ঞ বান্দাকে মহান প্রতিদান দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘অতএব, তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। আমার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকো, অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৫২)।
তাই কৃতজ্ঞতার সিজদা একজন মুমিনের হৃদয়ে বিনয়, আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও তাঁর অনুগ্রহের প্রতি সচেতনতা জাগিয়ে তোলে।
কৃতজ্ঞতার সিজদা যেভাবে করতে হয়
কৃতজ্ঞতার সিজদা হলো এক ধরনের সিজদা—এটি কোনো নামাজ বা দোয়া নয়, যেমন অনেকেই ভুলভাবে মনে করেন। এটি একটি একক সিজদা, যা একজন মুসলিম আদায় করে আল্লাহ তাআলার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে—যখন তিনি কোনো বড় নিয়ামত দান করেন বা কোনো বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেন। এই সিজদায় মুসলিম বলে ‘সুবহানা রব্বিয়াল আলা’ (পবিত্র আমার প্রতিপালক, যিনি সর্বোচ্চ), অন্তত একবার, আর তিন বা পাঁচবার বললে তা আরো উত্তম। কৃতজ্ঞতার সিজদা তিলাওয়াতের সিজদার মতোই; এতে নামাজের শর্তগুলো পূরণ করা আবশ্যক নয়। অর্থাৎ এই সিজদার জন্য অজু করা, কিবলামুখী হওয়া বা শরীর সম্পূর্ণ ঢাকা রাখা ফরজ নয়—যদিও এগুলো মানা উত্তম। কৃতজ্ঞতার সিজদা আদায়ের সময় তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলারও প্রয়োজন নেই। কেউ যদি বসা অবস্থায় থাকে, তাহলে সে সেখান থেকেই সিজদায় যেতে পারে; দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই। সিজদা শেষ করার পর সালাম ফিরানোও জরুরি নয়। এভাবে বিনয় ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে আল্লাহর সামনে সিজদা করা একজন মুমিনের ঈমানকে দৃঢ় করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ সুগম করে।


