Monday, October 20, 2025

জলঢাকায় টুইন পিট ল্যাট্রিন স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নে চলছে হরিলুট



মাহমুদ আল হাছান তিস্তা নিউজ ঃ  নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে গ্রামীন মানব সম্পদ উন্নয়নে পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র ও অস্বচ্ছল জনগোষ্ঠির মাঝে টুইন পিট ল্যাট্রিন স্থাপন প্রকল্পে সরকারি টাকার হরিলুট চলছে। মাঠ পর্যায়ে সরেজমিন অনুসন্ধানে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে চরম অব্যবস্থাপনা ও দূর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। প্রকল্পের আওতায় উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে দুই শতাধিক টুইন পিট লেট্রিন নির্মান ও অসচ্ছল দরিদ্র সুবিধাভোগিদের বাড়ীতে স্থাপন করার কথা থাকলেও বাছাই কমিটি ও উপজেলা জনস্বাস্থ্য কার্যালয়ের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর যোগসাজসে অনৈতিক সুবিধা গ্রহনের মাধ্যমে তা সচ্ছল ও সামর্থবান লোকজনের বাড়ীতে স্থাপনের প্রমান পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে খুটামারা ইউপি চেয়ারম্যান জনাব রকিবুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেয়া তালিকা পরিবর্তন করে আমাদেরকে না জানিয়েই উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিস সচ্ছল ও সামর্থ্যবান লোকজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে। এমনকি তারা কোথায় কিভাবে কাজ করছে আমাদরকে তা-ও জানানো হয় নাই।

ল্যাট্রিন প্রস্তত ও স্থাপনে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ইচ্ছেমতো নিম্নমানের  খোয়া ও মেথি বালু দিয়ে রিং স্লাব ও খুঁটি তৈরী করে তা সুবিধাভোগিদের বাড়ীতে স্থাপন করে দিচ্ছে। এই প্রতিবেদকের পরিদর্শনের সময় খুটামারা ইউনিয়নের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তিতলী স্যানিটেশনের নির্মান শ্রমিক ছাড়া সেখানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিংবা জলঢাকা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের কোনো কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারীকে পাওয়া যায় নাই। ঠিকাদারকে ফোন দিলে তিনি আসতে পারবেন না বলে জানান।

মীরগঞ্জ ইউনিয়নের ল্যাট্রিন নির্মানকারি প্রতিষ্ঠান আ.সাত্তার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের বালার পুকুর নামক স্থানে এই ল্যাট্রিনের রিং স্লাব ও খুঁটি তৈরী করছেন। তিনি রিং স্লাব ও খুঁটি নির্মানে চাতুরতার আশ্রয় নিয়ে একাধিক খোয়ার স্তুুপ করে রেখেছেন এবং এই ল্যাট্রিন নির্মানে সবচেয়ে নিম্নমানের ৩ নম্বর খোয়া ও ভিটি বালু ব্যাবহার করছেন। শৌলমারী ইউনিয়নের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান রিদয় ট্রেডার্স শৌলমারী ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড বড়বাড়ীতে এই ল্যাট্রিন সামগ্রী তৈরী করছেন এবং সেখানেও ২নং খোয়া ও মেথি বালু ব্যাবহার করা হচ্ছে। এখানে যে ল্যাট্রিন সামগ্রী তৈরী করা হচ্ছে তা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী জানেনই না বলে এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।

প্রতিটি ল্যাট্রিন নির্মান ও স্থাপন বাবদ ৩৫০০০/ টাকা বরাদ্দ থাকলেও প্রদত্ত রিং, স্লাব, প্যান, ঢেউটিন, খুঁটি,  খোয়া, সিমেন্ট ও মিস্ত্রী খরচ মিলে যার বাজারমূল্য কোনোভাবেই ১৫০০০- ১৮০০০/ টাকার বেশী নয় বলে প্রাপক সুবিধাভোগি সাদের আলী জানান। অর্থাৎ প্রতিটি ল্যাট্রিন স্থাপনে নিট লাভ দাড়াচ্ছে ১৫০০০ - ১৭০০০/ টাকা। সরকারি টাকার এমন যথেচ্ছ অপব্যাবহার ও লুটপাটে হতবাক সাধারন জনগন। 

এ বিষয়ে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের নির্বাহী প্রকৌশলী নঈমুল এহসান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, সুবিধাভোগী তালিকা প্রস্ততকরনে তার কোনো হাত নেই, এটি দাতা প্রতিষ্ঠান নিজেরাই মাঠ পর্যায়ে যাচাই করে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারগনের সহায়তায় তৈরী করেছে। তবে তালিকায় কোনো অসঙ্গতি থাকলে এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো রকম অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি করে থাকলে তিনি এ বিষয়ে ব্যাবস্থা গ্রহন করবেন। দুইদিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো ব্যাবস্থা গ্রহনের তথ্য পাওয়া যায় নাই। কাজ চলছে আগের মতই।


শেয়ার করুন