Friday, June 13, 2025

ড. ইউনূস-তারেক রহমান মুখোমুখি হবেন লন্ডনে আজ ঐতিহাসিক বৈঠক



তিস্তা নিউজ ডেস্ক ঃ গ্লোবালাইজেশনের যুগে যুদ্ধক্ষেত্রে রক্তপাত ঘটিয়ে বিজয়ের চেয়ে টেবিলে বসে সংলাপযুদ্ধে সমঝোতা-বিজয় গৌরব বেশি। পৃথিবীর বহু দেশের ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছে অন্যদেশে টেবিল সংলাপে। এক্ষেত্রে লন্ডন প্রসিদ্ধ। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর ’৭১ সালের ১৬ মার্চ ক্ষমতা হস্তান্তর ইস্যুতে ঢাকার প্রেসিডেন্ট ভবনে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন। ২১ মার্চ শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে অনির্ধারিত বৈঠক হলো। ২৪ মার্চ শীর্ষ দুই নেতার পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিলের চূড়ান্ত ফলাফল অগ্নিঝরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তান দ্বিখ-িত করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়। ইয়াহিয়া-মুজিবের ওই বৈঠক সফল হলে পরিস্থিতি যুদ্ধে গড়াতো না, যা নিয়ে এখনো পাকিস্তানের নেতাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। নেতাদের ব্যর্থতার দায় গোটা জাতির ওপর পড়েছিল। বাংলাদেশ এবং এই উপমহাদেশের ভাগ্য অতীতেও বহুবার লন্ডনে নির্ধারিত হয়েছে। এমনকি পাকিস্তান কারাগার থেকে বের হয়ে শেখ মুজিব প্রথমে লন্ডন হয়েই ঢাকায় ফিরেছিলেন। অর্ধশত বছর পর আরেকবার বাংলাদেশের ভাগ্য লন্ডনে নির্ধারিত হতে যাচ্ছে। গণতন্ত্র, জনগণের ভোটাধিকার, অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পথে হাঁটবে; নাকি ফের দেশের রাজপথ উত্তপ্ত হবে বিশৃংখল পরিস্থিতির পথে যাবে তারই ফয়সালা হবে। আজ লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠিতব্য এ বৈঠক কি ইয়াহিয়া-মুজিব বৈঠকের মতো ‘ট্র্যাজেডি’ হবে নাকি ১২ কোটি ভোটারের প্রত্যাশিত নির্বাচন উৎসবের চারা রোপিত হবে? ড. ইউনূস-তারেক রহমান বৈঠকের দিকে গোটা দেশ তাকিয়ে। বিশ্বের যে সব দেশের নেতারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র-আইনের শাসন ও ভবিষ্যত নিয়ে যারা ভাবেন তারাও লন্ডন বৈঠকের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। ওই বৈঠক নিয়ে জল্পনা-কল্পনা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-উচ্ছ্বাস-আশাবাদ সবকিছুই রয়েছে। দার্শনিক গেয়র্গ ভিলহেল্ম ফ্রিডরিখ হেগেলের মতে, ‘ইতিহাসের শিক্ষা হলো, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না’। কার্ল মার্ক্স বলেছেন, ‘ইতিহাসে কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে না। ঘটলে সেটা ট্র্যাজেডি আকারে হতে পারে, তেমনি প্রহসন রূপেও হয়’। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ ইয়াহিয়া-মুজিবের বৈঠকের মতো কার্ল মার্ক্সের উক্তি ‘ইতিহাসে কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে না’ দেখতে চায়। মানুষ চায় ৮৬ বছর বয়সী ড. ইউনূস লন্ডন বৈঠকে নির্বাচন ইস্যুতে সংকটের সুরাহা করে ইতিহাস হয়ে থাকার পথে একধাপ এগোবেন। ৬০ বছরেরও কম বয়সী রাজনীতিক তারেক রহমানও দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দেবেন। দুই পক্ষ কিছু ছাড় দিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের ঐক্যের বিভেদের বেড়াজাল ছিঁড়ে ফেলবেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকরা অবশ্য ল-ন বৈঠক নিয়ে প্রচ- আশাবাদী। সবাই বলছেন বৈঠক সফল হবে। তাদের মতে, বয়সে পিতা-পুত্র সমতুল্য ড. ইউনূস-তারেকের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে গোটা জাতি। তারা মানুষকে আশাহত করবেন না।

শেয়ার করুন